শুক্রবার ১ আগস্ট ২০২৫ - ১১:৫৬
যদি জুলুমই ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আগমনের পটভূমি হয়, তবে কেন আমাদের তা প্রতিহত করতে হবে?

ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আগমনের প্রেক্ষাপটে জুলুম ও অবিচারের প্রসার বহু দিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রশ্ন ওঠে—এই অবিচার কি তাঁর আগমনের পথ প্রশস্ত করে, না কি এটি মানবতার অধিকতর ন্যায়বিচার চাওয়ার এক ইঙ্গিতমাত্র?

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ধর্মীয় পণ্ডিতরা সতর্ক করেছেন যে, এসব বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা মানুষকে সামাজিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে পারে। তবে তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন—জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইই হলো প্রকৃত ‘প্রতীক্ষা’ (ইন্তেজার), তা কখনোই ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আগমনের পথে বাধা নয়।

দুনিয়া জুলুমে ভরে যাবে—কিন্তু কেন?
ইসলামী শিক্ষায় বর্ণিত আছে, ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আগমনের আগে পৃথিবী জুলুম ও অবিচারে ভরে যাবে। হাদীসে এসেছে: “তিনি পৃথিবীকে ন্যায় ও ইনসাফে পূর্ণ করে তুলবেন, যেমনটি তা জুলুম ও অবিচারে ভরে গিয়েছিল।” [বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃষ্ঠা ৩৪০]

কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই জুলুম কি ইমামের আগমনের অনুঘটক, নাকি শুধু একটি অবস্থা মাত্র? এবং আমরা কি চুপ থেকে এই অবিচারকে বেড়ে উঠতে দেব, যাতে আগমন ত্বরান্বিত হয়?

হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা পারচেহবাফের ব্যাখ্যা:
এই বিষয়ে নৈতিক প্রশ্নের বিশ্লেষক হুজ্জাতুল ইসলাম রেজা পারচেহবাফ বলেন—এই হাদীস জুলুমকে “অবস্থা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে, “কারণ” হিসেবে নয়। আল্লামা তাবাতাবায়ী-ও বলেন, “বিশ্বে জুলুমের প্রসার মানে হলো—মানবতা এতটাই দুর্দশাগ্রস্ত যে, ন্যায়ের আগমন একটি অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়।” [আল-মীযান, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ৩২৭]

ব্যক্তি ও সমাজ: আমাদের দ্বায়িত্ব দ্বিমাত্রিক
ব্যক্তিগত দায়িত্ব: কুরআনে এসেছে: “তোমরা সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে।” [সূরা আলে ইমরান: ১১০]

সামাজিক দায়িত্ব: ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি সমাজ গঠন করা এবং জুলুম প্রতিরোধ করা হল গায়েবী ইমামের আগমনের বাস্তব প্রস্তুতি।

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কারবালার বিপ্লব তার বাস্তব উদাহরণ, যেখানে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শহীদ হন।

‘প্রতীক্ষা’ মানেই সক্রিয়তা
শহীদ মুর্তজা মুতাহহারি তাঁর গ্রন্থ “কিয়াম ও ইনকিলাবে মাহদী”-এর পৃষ্ঠা ২৫তম পৃষ্ঠায় বলেন,

“প্রতীক্ষা মানে হলো—জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আগমনের পরিবেশ তৈরি করা।”

তাঁর মতে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নৈতিক শিক্ষা, ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই—সবই ‘প্রতীক্ষা’র বাস্তব রূপ।

শরয়ি ভিত্তি: নাফি সাবিল ও সামাজিক দায়িত্ব
কুরআনের একটি নীতি হলো “নাফি সাবিল”, অর্থাৎ— “আল্লাহ কখনও অবিশ্বাসীদের জন্য মুমিনদের উপর কর্তৃত্বের পথ রাখেন না।” [সূরা নিসা: ১৪১]

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন,

“যে ব্যক্তি মুসলমানদের ব্যাপারে চিন্তিত নয়, সে মুসলমান নয়।”

[আল-কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬৪]

ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত
ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর নেতৃত্বে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আগমনের প্রস্তুতির এক বাস্তব দৃষ্টান্ত, যেখানে জুলুম প্রতিরোধ করে একটি ন্যায়ভিত্তিক কাঠামো তৈরি করা হয়।

পরিসমাপ্তি: জুলুম আগমনের অবস্থা হলেও, তা কখনোই ধর্মীয় দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত হতে পারে না।

জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা মানেই ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। জুলুমের বিরুদ্ধে নীরবতা হারাম, আর ন্যায় প্রতিষ্ঠা একটি ফরজ কাজ।

শহীদ সাদর (রহ.) বলেন,

“প্রতীক্ষা হলো জাগরণের নির্যাস, নিদ্রার উপাদান নয়।”

সারকথা: জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিটি পদক্ষেপ, হোক তা নৈতিক শিক্ষা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, কিংবা সমাজসেবার মাধ্যমে—সবই ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আগমনের পথে একটি বাস্তব পদক্ষেপ। এটি কেবল এক আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং একটি দায়িত্ব।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha